বাঙালির বেড়ানো সেরা চারটি ঠিকানা
বাঙালি মানে বেড়ানো পাগল | দু একদিন ছুটি পেলো মানে বাঙালি চলল ঘুরতে | সে সমুদ্রই হোক ,পাহাড়ি হোক বা নদী হোক। বাঙালির ঘোড়া চাই চাই ,|এই জন্য বলা হয় বাঙালির পায়ের তলায় সরষে । এই বাঙ্গালীদের ঘুরতে যাওয়ার এতই নেশা ,যে গরমের ছুটিতে পূজোর ছুটিতে সমস্ত পাহাড় সমুদ্র ভ্রমণ স্থল গুলো লোকে গিজগিজ করে | যার ক্ষমতা যেমন , সে ঠিক তেমন জায়গাতেই ঘুরতে যায় |তবে বাঙ্গালিরা বেশিরভাগই ভারতের মধ্যে ঘুরতে করতে পছন্দ করে | কিন্তু সুযোগ পেলে বাঙালিরা বিদেশ ঘুরতে যায় |এখন একটা প্রবণতা হয়ে গিয়েছে অল্প বয়সী বাঙালি ছেলে-মেয়েদের বিদেশ ঘুরতে যাওয়ার | দেশে ঘুরতে যাওয়া বাঙালিরা যে সমস্ত স্থানে ঘুরতে পছন্দ করে ,তার কয়েকটি দিলাম | আপনারাও চাইলে ঘুরে আসতে পারেন
দীঘা
বাঙালি সবচেয়ে বেশি যায় দীঘা | দীঘা হলো এমন একটা স্থান ,যেখানে প্রত্যেক বাঙালি সারা জীবনে বেশ কয়েকবার ভ্রমণ করে ,তবু তাদের দীঘা ভ্রমণের স্বাদ মেটে না |এখানকার উত্তাল জলরাশি ,দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র , ঝাউবন এবং আর কাছাকাছি অনেকগুলি টুরিস্ট স্পট থাকায় ,এটা সপ্তাহ আনতে পর্যটনের সেরা হয়ে উঠেছে । এখানে রয়েছে প্রচুর হোটেল,রিসোর্ট ,হলিডে হোম | ছুটির দিন প্রায় প্রত্যেকটা হোটেল রিসোর্ট পর্যটকে হয়েযায় | এখানে এলে ,আগে থেকে হোটেল বুক করে আসাটাই শ্রেয় |দীঘাতে স্নান করা অনাবিল আনন্দ । সকালে উঠে সূর্যোদয় সূর্যাস্ত এবং সকালবেলা ঝিনুক কুড়ানোর এর মজাই আলাদা|
এছাড়াও ,এখানে কাছেই রয়েছে সাইনসিটি ,কাছেই রয়েছে অমরাবতী পার্ক ,যেখানে আপনারা বোটিং আর ট্রয় ট্রেন ড্রাইভিং করতে পারেন |তাছাড়া যেতে পারেন ঢেউসগর পার্ক দেখতে ,সাধারণত সন্ধ্যেবেলায় বেশি জমজমাট হয় |এছাড়া কাছেই রয়েছে উদয়পুর, এখানে সমুদ্র দেখতে দেখতে ডাবের জল খেতে পারে| তিন চার কিলোমিটার দূরে রয়েছে চন্দনেশ্বর শিব মন্দির, এটি একটি প্রাচীন শিব মন্দির ,এটা উড়িষ্যা রাজ্যে অবস্থিত| দীঘা থেকে প্রায় কিলোমিটার খানেক গেলে পশ্চিমবঙ্গ শেষ হয়ে ,উড়িষ্যা রাজ্য পড়ে যায় |এই চন্দনেশ্বর মন্দির উড়িষ্যা রাজ্যে অবস্থিত , এছাড়া আপনারা একটা গাড়ি ভাড়া করে কাছাকাছি মন্দারমনিতে ঘুরে আসতে পারেন ,সেখানে একদিন থাকতেও পারেন | এছাড়া যাবেন শংকরপুর |শংকরপুর একটা মৎস্য বন্দর | আপনি প্রচুর ট্রলার, মাছ ধরা সরঞ্জাম এবং জেলে দেখতে পেয়ে যাবেন |তবে শংকরপুরে থাকার জায়গা কিন্তু সীমিত, আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াটাই ভালো ,এছাড়াও যেতে পারেন তাজপুর |তাজপুর ও একদিনে এগিয়ে চলে আসতে পারেন আবার কিছু একটা দিন কাটিও আসতে পারেন |
কিভাবে যাবেন ?
ট্রেন ও বাস দুভাবেই যাওয়া হয়
ট্রেনে :
তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস (Tamralipta Express) : হাওড়া থেকে ছাড়ে সকাল 06:45 , দিঘা পৌঁছয় সকাল 10:05 |
দীঘা হাওড়া লোকাল (Digha Howrah Local): দিঘা থেকে ছাড়ে 10:35 , হাওড়া পৌঁছয় 13:55
বাসে :
-
কলকাতা থেকে বাস পরিষেবা:
ধর্মতলা (Dharmatala/Esplanade) থেকে রাজ্য পরিবহন (WBSTC), প্রাইভেট বা Volvo AC বাস পাওয়া যায়। -
বাসের ধরন:
-
এসি ও নন-এসি বাস
-
স্লিপার ও সিটিং
-
সকাল ও রাতের বাস পরিষেবা
-
-
ভাড়া ও সময়:
ভাড়া ₹200 – ₹500 এর মধ্যে ।
সময় লাগে প্রায় ৪.৫ – ৫.৫ ঘণ্টা।
কোথায় থাকবেন ?
দীঘাতে প্রচুর সরকারি ও বেসরকারি হোটেল , গেস্ট হাউস রয়েছে
কিছু বেসরকারি হোটেল
Abhyagama Hotel
Iconic Hotel Digha
Le Roi Digha
Hotel Dolphin
Cygnett Inn Sea View
Sea Sand Digha
কিছু সরকারি থাকবার জায়গা
Dighali Tourism Property -Old Digha
Holiday Home (Labour Board)-New Digha
PWD Inspection Bungalow Old Digha - Gobindabasan
কথন যাবেন ?
দিঘা বছরের সবসময় জাওয়াযায় , তবে ছুটির দিন গুলোতে ভিড় হয় অনেক বেশি | তাই ছুটির দিন গেলে আগে থেকে হোটেল বুক করে যাওয়াটাই নিরাপদ |
দিঘা বেড়ানোর কিছু পরামর্শ
সরকারি পরিচয় পত্র সঙ্গে রাখবেন , হোটেল কর্তৃপক্ষ যাচাই করতে পারে |
সবসময় নিরাপদ জায়গায় চান করবেন |
ভরা কোটাল বা দুর্যোগের সময় সমুদ্রের কাছে যাবেন না |
পরিষ্কার , পরিছন্ন জায়গায় আহার গ্রহণ করবেন | অযথা থানীয়দের সঙ্গে তর্কে জড়াবেন না |
বকখালি
এরপরে যে জায়গার নাম বলবে সেটা হল বকখালি | বকখালি দক্ষিণ ২৪ পরগনা অবস্থিত একটাও জনপ্রিয় ভ্রমণ কেন্দ্র |বকখালি যেতে গেলে প্রথম আপনাকে শিয়ালদা থেকে নামখানা লোকাল ধরে নামখানা যেতে হবে |সেখান থেকে টোটো করে বকখালি বকখালি |মোটামুটি সারা বছরই পর্যটকদের সমাগম দেখা যায় |এখানে হচ্ছে প্রচুর হোটেল সরকারি বেসরকারি উভয় ধরনের হোটেলে পাওয়া যায় | এখানে দিগন্ত বিস্তৃত সোনালী বালি ,সমুদ্রের ঢেউ, সুন্দরবনের বাতাস এবং দূর থেকে ম্যানগ্রোভ অরণ্য একটা অদ্ভুত শোভা বর্ধন করে |আর বকখালিতে প্রচুর পরিমাণে কাঁকড়া ও চিংড়ি মাছ পাওয়া যায় ,তো যদি বকখালি ঘুরতে যান অবশ্যই কাঁকড়া চিংড়ি মাছ খেয়ে তবে আসবে। বকখালি স্নান ছাড়াও সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় দেখার মত ,এছাড়া আপনারা একটা ছোট গাড়ি করে ঘুরে আসবেন |
ফ্রেজারগঞ্জ , ফ্রেজারগঞ্জ একটি মৎস্য বন্দ র , এখানে প্রচুর মাছ ধরার ট্রলার দেখা যায় এবং এটি শহরের কোলাহল থেকে বহু দূরে নিরিবিলি একটা সমুদ্র সৈকত |বকখালি যারা বকখালি যারা যায় তারা ফ্রেজারগঞ্জ অবশ্যই ঘুরে আসবেন ,এরপরে আমরা যেটা কথা বলব সেটা হলো জম্বু দ্বীপ, জম্বু দ্বীপ যেতে গেলে একটা ছোট নৌকা বা লঞ্চ ভাড়া করতে হয় এবং যেতে হয় |আপনারা প্রাকৃতিক পরিবেশে পাখি দেখতে পাবেন ,এটাও সুন্দরবনের অংশ, এছাড়া একটা প্রাকৃতিক নির্জনতা উপভোগ করতে পারবেন|
কিভাবে যাবেন ?
ট্রেন ও বাস দুভাবেই যাওয়া হয়
ট্রেনে :
34792 Sealdah–Namkhana Local শিয়ালদহ থেকে ছাড়ে 13:20 পৌঁছয় 15:55
34794 Sealdah–Namkhana Fast Local শিয়ালদহ থেকে ছাড়ে 21:30 পৌঁছয় 00:15 (রাত)
বাসে :
-
কলকাতা থেকে বাস পরিষেবা:
ধর্মতলা (Dharmatala/Esplanade) থেকে রাজ্য পরিবহন (WBSTC), প্রাইভেট বাস পাওয়া যায়। -
বাসের ধরন:
নন-এসি বাস
-
ভাড়া ও সময়:
ভাড়া ₹83 – ₹200 এর মধ্যে ।যাত্রা সময় আনুমানিক ২ঘন্টা ৪৫মিনিট থেকে ৩ ঘণ্টা ৪৫মিনিট পর্যন্ত
কোথায় থাকবেন ?
বকখালিতে প্রচুর সরকারি ও বেসরকারি হোটেল , গেস্ট হাউস রয়েছে
কিছু বেসরকারি হোটেল
Hotel Amarabati
Balaka Lodge
Hotel Dolphin
Hotel Bay View
Hotel Inodoy (Nirala)
Hotel O Sanjog
FabHotel Prime Indeedcare Resort Bakkhali
Tapama Resort and Fish Restaurant
Palette – Beachfront Elegance Resort
কিছু সরকারি থাকবার জায়গা
Balutot Tourism Property
West Bengal Fisheries Department Guest House
Forest Guest House (Forest Dept.) – Bakkhali / Henry Island
কথন যাবেন ?
বকখালিতে সারাবছর যাওয়া যায় , তবে শীতকালে যাওয়াটা বেশি ভালো হবে | সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়া করবে দুর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়ায় না যাওয়া ভালো |
বকখালিতে বেড়ানোর কিছু পরামর্শ
- সরকারি পরিচয় পত্র সঙ্গে রাখবেন , হোটেল কর্তৃপক্ষ যাচাই করতে পারে |বকখালি বাংলাদেশ খুব কাছাকাছি , তাই সরকারি পরিচয় পত্র হাতে থাকলে বিদেশি বলে প্রশাসন সন্দেহ করবে না |
- সবসময় নিরাপদ জায়গায় চান করবেন | সমুদ্রে খুব দূর পর্যন্ত নামবেন না , যেকোনো সময় হঠাৎ জলস্তর বেড়ে যেতে পারে |
- ভরা কোটাল বা দুর্যোগের সময় সমুদ্রের কাছে যাবেন না | কাছাকাছি মৎস বন্দর হওয়ায় , আবহাওয়া খারাপ হলে প্রশাসন প্রচার চালাতে থাকেন , প্রশাসনের নির্দেশ পালন করে চলা উচিত |
- পরিষ্কার , পরিছন্ন জায়গায় আহার গ্রহণ করবেন |
মন্দারমনি
বাঙালির আরেকটি প্রিয় জায়গা হল মন্দারমনি |মন্দারমনি খুব সম্প্রতি বাঙালির মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে | ১৩ কিলোমিটার লম্বা বিচ , সমুদ্রের জল, সোনালী বালি ,সমুদ্রের হাওয়া জল বারবার আকর্ষণ করেছে মান্দারমনি তার নিজের দিকে | মন্দারমনি দু তিন দিন ঘোড়ার জন্য অত্যন্ত শ্রেষ্ঠ জায়গা । এখানেও প্রচুর হোটেল গড়ে উঠেছে ,তবে দিঘার মত এত ভিড় হয় না এখানে। আপনি যেখানে খুশি চান করতে পারেন , হেঁটে অনেক দূর ঘুরে আসতে পারেন ,লাল কাঁকড়া দেখতে পারেন | একটা গাড়ি ভাড়া করে আপনি দীঘা , শংকরপুর, ঘুরে আসতে পারেন | এখানে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় খুবই কম খরচে | মন্দারমনি আসতে গেলে আপনাকে আসতে হবে চাউলখোলা | এখান থেকে আসতে হবে মন্দারমনি |এখানেও সমুদ্রের তীরে মাছ ভাজা খেতে পারেন ,অক্টোপাস ভাজা খেতে পারেন এবং সমুদ্রের তীরে বিভিন্ন রকম পসরা সাজিয়ে বসে যায় সন্ধ্যেবেলা ,আপনারা প্রয়োজন মত জিনিস কিনতে পারে|
কিভাবে যাবেন ?
ট্রেনে : কলকাতা (Howrah বা Shalimar) থেকে Contai (Kanthi), Ramnagar বা Digha পর্যন্ত লোকাল বা এক্সপ্রেস ট্রেন | সেখানথেকে ছোট গাড়ি বা টোটো |
বাসে :
কলকাতা থেকে বাস পরিষেবা:
ধর্মতলা (Dharmatala/Esplanade) থেকে রাজ্য পরিবহন (WBSTC), প্রাইভেট বা Volvo AC বাস পাওয়া যায়।
বাসের ধরন:
এসি ও নন-এসি বাস
স্লিপার ও সিটিং
সকাল ও রাতের বাস পরিষেবা
নামতে হবে চাউল খোলা , সেখান থেকে ছোট গাড়ি বা টোটো |ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা মতো |
কোথায় থাকবেন ?
এখানে প্রচুর হোটেল রয়েছে
1) Hotel Sonar Bangla
2) Prime Beach Resort
3 )Hotel Mainak Mandarmani
4) Shanti Seaview Resort & Spa
5) Sea Star Resort
6) Ajoy Minar / Massara
7) Sun City / Digante Resorts
তবে সেরা ঠিকানা 'Mandarmani Ramkrishna Sebasram' , মাত্র ৬০০ টাকা দিয়ে এখানে থাকা খাওয়ার দারুন বন্দোবস্ত |সম্ভবতো , এখানে সরকারি কোনো থাকার বেবস্তা নেই |
কিভাবে যোগাযোগ করেবন : Ramkrishna Vivekaknda Mission
কথন যাবেন ?
মন্দারমনি দারুন জায়গা , পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর একটা দারুন জায়গা | সারাবছর যেতে পারেন | ছুটির দিনগুলোতে হোটেল পাওয়া মুশকিল হয়েপড়ে |
মন্দারমনি বেড়ানোর কিছু পরামর্শ
সরকারি পরিচয় পত্র সঙ্গে রাখবেন , হোটেল কর্তৃপক্ষ যাচাই করতে পারে | কেউ কেউ পরিচয় পোর্টার প্রতিলিপি জমারাখে |
সবসময় নিরাপদ জায়গায় চান করবেন | সমুদ্রের বেশি গভীরে যাবার দরকার নেই |
ভরা কোটাল বা দুর্যোগের সময় সমুদ্রের কাছে যাবেন না |
লাল কাঁকড়া , ঝাউ গাছ নষ্ট করবেন না |মদ্যপ অবস্থায় জলে নামবেন না |