বাঙালি মানে ঘোড়া পাগল | দু একদিন ছুটি পেলো মানে বাঙালি চলল ঘুরতে | সে সমুদ্রই হোক ,পাহাড়ি হোক বা নদী হোক। বাঙালির ঘোড়া চাই চাই |এই জন্য বলা হয় বাঙালির পায়ের তলায় সরষে । এই বাঙ্গালীদের ঘুরতে যাওয়ার এতই নেশা ,যে গরমের ছুটিতে পূজোর ছুটিতে সমস্ত পাহাড় সমুদ্র ভ্রমণ স্থল গুলো লোকে গিজগিজ করে |যার ক্ষমতা যেমন , সে ঠিক তেমন জায়গাতেই ঘুরতে যায় |তবে বাঙ্গালিরা বেশিরভাগই ভারতের মধ্যে ঘুরতে করতে পছন্দ করে ঘুরতে পছন্দ করে | কিন্তু সুযোগ পেলে বাঙালিরা বিদেশ ঘুরতে যায় |এখন একটা প্রবণতা হয়ে গিয়েছে অল্প বয়সী বাঙালি ছেলে-মেয়েদের বিদেশ ঘুরতে যাওয়ার | বিদেশে ঘুরতে যাওয়া বাঙালিরা যে সমস্ত স্থানে ঘুরতে পছন্দ করে তার কয়েকটি দিলাম | আপনারাও চাইলে ঘুরে আসতে পারেন
সবচেয়ে বাঙালি সবচেয়ে বেশি যায় দীঘা |দীঘা হলো এমন একটা স্থান ,যেখানে প্রত্যেক বাঙালি সারা জীবনে বেশ কয়েকবার ভ্রমণ করে ,তবু তাদের দীঘা ভ্রমণের স্বাদ মেটে না |এখানকার উত্তাল জলরাশি ,দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র , ঝাউবন এবং আর কাছাকাছি অনেকগুলি টুরিস্ট স্পট থাকায় ,এটা সপ্তাহ আনতে পর্যটনের সেরা হয়ে উঠেছে । এখানে রয়েছে প্রচুর হোটেল,রিসোর্ট ,হলিডে হোম | ছুটির দিন প্রায় প্রত্যেকটা হোটেল রিসোর্ট পর্যটকে হয়েযায় | এখানে এলে ,আগে থেকে হোটেল বুক করে আসাটাই শ্রেয় |দীঘাতে স্নান করা অনাবিল আনন্দ । সকালে উঠে সূর্যোদয় সূর্যাস্ত এবং সকালবেলা ঝিনুক কুড়ানোর এর মজাই আলাদা|
এছাড়াও ,এখানে কাছেই রয়েছে সাইনসিটি ,কাছেই রয়েছে অমরাবতী পার্ক ,যেখানে আপনারা বোটিং আর ট্রয় ট্রেন ড্রাইভিং করতে পারেন |তাছাড়া যেতে পারেন ঢেউসগর পার্ক দেখতে ,সাধারণত সন্ধ্যেবেলায় বেশি জমজমাট হয় |এছাড়া কাছেই রয়েছে উদয়পুর, এখানে সমুদ্র দেখতে দেখতে ডাবের জল খেতে পারে| তিন চার কিলোমিটার দূরে রয়েছে চন্দনেশ্বর শিব মন্দির, এটি একটি প্রাচীন শিব মন্দির ,এটা উড়িষ্যা রাজ্যে অবস্থিত| দীঘা থেকে প্রায় কিলোমিটার খানেক গেলে পশ্চিমবঙ্গ শেষ হয়ে ,উড়িষ্যা রাজ্য পড়ে যায় |এই চন্দনেশ্বর মন্দির উড়িষ্যা রাজ্যে অবস্থিত ,এছাড়া আপনারা একটা গাড়ি ভাড়া করে কাছাকাছি মন্দারমনিতে ঘুরে আসতে পারেন ,সেখানে একদিন থাকতেও পারেন | এছাড়া যাবেন শংকরপুর |শংকরপুর একটা মৎস্য বন্দর | আপনি প্রচুর ট্রলার, মাছ ধরা সরঞ্জাম এবং জেলে দেখতে পেয়ে যাবেন |তবে শংকরপুরে থাকার জায়গা কিন্তু সীমিত, আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াটাই ভালো ,এছাড়াও যেতে পারেন তাজপুর |তাজপুর ও একদিনে এগিয়ে চলে আসতে পারেন আবার কিছু একটা দিন কাটিও আসতে পারেন |
এরপরে যে জায়গার নাম বলবে সেটা হল বকখালি | বকখালি দক্ষিণ ২৪ পরগনা অবস্থিত একটাও জনপ্রিয় ভ্রমণ কেন্দ্র |বকখালি যেতে গেলে প্রথম আপনাকে শিয়ালদা থেকে নামখানা লোকাল ধরে নামখানা যেতে হবে |সেখান থেকে টোটো করে বকখালি বকখালি |মোটামুটি সারা বছরই পর্যটকদের সমাগম দেখা যায় |এখানে হচ্ছে প্রচুর হোটেল সরকারি বেসরকারি উভয় ধরনের হোটেলে পাওয়া যায় | এখানে দিগন্ত বিস্তৃত সোনালী বালি ,সমুদ্রের ঢেউ, সুন্দরবনের বাতাস এবং দূর থেকে ম্যানগ্রোভ অরণ্য একটা অদ্ভুত শোভা বর্ধন করে |আর বকখালিতে প্রচুর পরিমাণে কাঁকড়া ও চিংড়ি মাছ পাওয়া যায় ,তো যদি বকখালি ঘুরতে যান অবশ্যই কাঁকড়া চিংড়ি মাছ খেয়ে তবে আসবে। বকখালি
স্নান ছাড়াও সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় দেখার মত ,এছাড়া আপনারা একটা ছোট গাড়ি করে ঘুরে আসবেন
ফ্রেজারগঞ্জ , ফ্রেজারগঞ্জ একটি মৎস্য বন্দ র , এখানে প্রচুর মাছ ধরার ট্রলার দেখা যায় এবং এটি শহরের কোলাহল থেকে বহু দূরে নিরিবিলি একটা সমুদ্র সৈকত |বকখালি যারা বকখালি যারা যায় তারা ফ্রেজারগঞ্জ অবশ্যই ঘুরে আসবেন ,এরপরে আমরা যেটা কথা বলব সেটা হলো জম্বু দ্বীপ, জম্বু দ্বীপ যেতে গেলে একটা ছোট নৌকা বা লঞ্চ ভাড়া করতে হয় এবং যেতে হয় |আপনারা প্রাকৃতিক পরিবেশে পাখি দেখতে পাবেন ,এটাও সুন্দরবনের অংশ, এছাড়া একটা প্রাকৃতিক নির্জনতা উপভোগ করতে পারবেন|
বাঙালির আরেকটি প্রিয় জায়গা হল মন্দারমনি |মন্দারমনি খুব সম্প্রতি বাঙালির মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে | ১৩ কিলোমিটার লম্বা বিচ , সমুদ্রের জল, সোনালী বালি ,সমুদ্রের হাওয়া জল বারবার আকর্ষণ করেছে মান্দারমনি তার নিজের দিকে | মন্দারমনি দু তিন দিন ঘোড়ার জন্য অত্যন্ত শ্রেষ্ঠ জায়গা । এখানেও প্রচুর হোটেল গড়ে উঠেছে ,তবে দিঘার মত এত ভিড় হয় না এখানে। আপনি যেখানে খুশি চান করতে পারেন , হেঁটে অনেক দূর ঘুরে আসতে পারেন ,লাল কাঁকড়া দেখতে পারেন | একটা গাড়ি ভাড়া করে আপনি দীঘা , শংকরপুর, ঘুরে আসতে পারেন | এখানে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় খুবই কম খরচে | মন্দারমনি আসতে গেলে আপনাকে আসতে হবে চাউলখোলা | এখান থেকে আসতে হবে মন্দারমনি |এখানেও সমুদ্রের তীরে মাছ ভাজা খেতে পারেন ,অক্টোপাস ভাজা খেতে পারেন এবং সমুদ্রের তীরে বিভিন্ন রকম পসরা সাজিয়ে বসে যায় সন্ধ্যেবেলা ,আপনারা প্রয়োজন মত জিনিস কিনতে পারে|
বাঙালির বেড়াতে যাওয়ার কথা যদি বলি এবং গঙ্গাসাগর না বলি তাহলে অপূর্ণ থেকে যায় | গঙ্গাসাগর কপিলমুনির আশ্রম এবং গঙ্গাসাগর মেলার জন্য বিখ্যাত |গঙ্গাসাগর মেলা মোটামুটি জানুয়ারির মাঝে অনুষ্ঠিত হয় বেশ ,কয়েক লাখ পূর্ণাথী এসে হাজির গঙ্গাসাগর মেলায়| গঙ্গাসাগরের স্নান করলে নাকি পাপ ধুয়ে যা যায়| গঙ্গাসাগর আসতে গেলে আপনাকে ট্রেনে প্রথমে আসতে হবে কাকদ্বীপ| কাকদ্বীপ থেকে ১০ নম্বর লঞ্চ | সেখান থেকে লঞ্চে কচুবেড়িয়া এবং কচুবেড়িয়া থেকে বাস অথবা টোটো করে আসতে হবে গঙ্গাসাগর । এই গঙ্গাসাগর আসতে গেলে আপনার অটো নেবে ৫০ টাকা গঙ্গাসাগরে| প্রচুর হোটেল রয়েছে , প্রাইভেট লজ সরকারি লজ রয়েছে |এখানে এসে আপনারা কপিলমুনি আশ্রমে পুজো দিতে পারেন এবং গঙ্গাসাগরে স্নান করে আপনার পাপমুক্ত হতে পারেন| তবে মেলার সময় প্রচুর ভিড় হয় সেই সময় প্রশাসন সামলাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেন |